২০ নভেম্বর ২০২৫, ১০:২০ অপরাহ্ন, ২৮শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, বৃহস্পতিবার, ৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এস. এম. সাইফুল ইসলাম কবির, সুন্দরবন থেকে ফিরে:
বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের উপকূলজুড়ে আবারও প্রকৃতির হানার মুখে উদ্বিগ্ন খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার লক্ষাধিক মানুষ। ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতের পর উপকূলীয় এলাকার প্রায় ৫১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এখনো চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, রেমালের দাপটে তিন জেলার অধীনে থাকা ৬৭৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে প্রায় ২৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর প্রভাবে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে লবণাক্ত পানি, নষ্ট হয়েছে ফসল, ভেসে গেছে পুকুর ও ঘেরের মাছ। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ।
আতঙ্কিত উপকূলবাসী, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধে বাস অস্থির
গাবুরা ইউনিয়নের বাসিন্দা এসএম ওয়ায়েজ কুরুনী বলেন,
“ষাটের দশকে নির্মিত এই বেড়িবাঁধ এখনো জোড়াতালি দিয়ে চলছে। ঝড়ের নাম শুনলেই আতঙ্কে থাকি, কারণ আমরা ঝড়কে নয়, বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়ার ভয় করি।”
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, রেমালের আঘাতে সাতক্ষীরার গাবুরা, প্রতাবনগরসহ বেশ কিছু এলাকার বাঁধ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাবুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিএম মাকসুদুল আলম জানান,
“আমার ইউনিয়নে যেকোনো সময় আবারও বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। আমরা ত্রাণ চাই না, চাই টেকসই বেড়িবাঁধ।”
আশাশুনির প্রতাবনগর ইউপি চেয়ারম্যান আবু দাউদ বলেন,
“বর্ষা আসছে, আর সামনে দুটি ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস আছে। এখনো অনেক জায়গা ঝুঁকিপূর্ণ রয়ে গেছে। দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছি।”
বারবার মেরামত, কিন্তু সমাধান নেই
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন বলেন,
“রেমালে ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশ কিছু জায়গায় মেরামত শেষ হলেও নতুন নতুন এলাকায় আবারও ফাটল দেখা দিয়েছে। সামনে শক্তি ও মন্তা নামের দুটি ঘূর্ণিঝড় আসছে, তাই নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।”
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মো. আল-বিরুনী বলেন,
“২৯৩ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে ১২.৮৭ কিমি বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কিছুটা সংস্কার শেষ হলেও এখনো প্রায় ২০ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে।”
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার দাবি
‘নদী বাঁচাও আন্দোলন’ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আশেক ইলাহী জানান,
“১৯৬০ সাল থেকে এই এলাকায় বাঁধ নির্মাণ শুরু হয়। সেই থেকেই নদী-খাল মরে যেতে থাকে। প্রতি বছর ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাজার হাজার হেক্টর জমি ও ঘরবাড়ি। এখন সময় এসেছে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে জাতীয় অগ্রাধিকার নির্ধারণের।”
সুন্দরবনের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের মতে, ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ত্রাণ বা অস্থায়ী মেরামত নয়— স্থায়ী সমাধানই হতে হবে প্রাধান্য। নয়তো জলবায়ু পরিবর্তনের এই যুগে প্রতি বছরই এমন দুর্যোগে মানুষ বাস্তুচ্যুত হতেই থাকবে।**ছবি সংযুক্ত আছে।